ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ? freelancing in bangladesh

ফ্রিল্যান্সিং শেখা কিছু নয়। শেখার জন্য মূলত স্কিল। যে ব্যক্তি একটি ভালো স্কিলে এক্সপার্ট , সে কিন্তু চাইলেই যে কোন সময় ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ঢুকে যেতে পারে এক্ষেত্রে তার বায়ারদের কনভেন্স করা এবং কাজ পেতে খুব একটা কষ্ট হবে না। কিন্তু যদি একজনের  স্কিল-ই না থাকে তবে সে প্রতিদিন  ফ্রিল্যান্সিং-এ ভুরিভুরি কাজ পেলেও এটা বলা যায়না যে সে ফ্রিল্যান্সিং জানে। এক্ষেত্রে সে কখনোই  নিজের কাজের মাধ্যমে অন্যকে খুশি করতে এবং নিজের আধিপত্য বিস্তারে সফল হবেনা। স্কিল শেখার জন্য বেশ কয়েকটি ধাপ নিচে উল্লেখ করা হলো। আপনি যদি সত্যি সত্যি একজন ফ্রিল্যান্সার হতে চান তবে আপনি কিছু না জেনে থাকলেও ধাপগুলো অনুসরণ করে একজন ফ্রিল্যান্সার এক্সপার্ট হতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার শেখার সময়সীমা নির্ধারিত হবে আপনি কেমন কাজ শিখতে চান  সেই বিষয়ের উপর।



ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেক স্কিল রয়েছে। আপনি কোন স্কিল শিখতে চান সেটা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

ধরে নিচ্ছি, আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে চান। এক্ষেত্রে আপনার শেখার ধাপ সমূহ নিম্নরূপ ঃ

১. ইউটিউব । Youtube (১ মাস)

আপনার অনুসরণকৃত সর্ব প্রথম ধাপটি হবে ইউটিউব। আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সিং শেখার  যাত্রা শুরু করবেন এই ইউটিউব এর মাধ্যমে। আপনি আপনার যাত্রার প্রথম এক মাস সময় ব্যয় করবেন ইউটিউবে।  এই এক মাসে আপনি শিখবেনঃ

  • গ্রাফিক্স ডিজাইন এ কি কি রয়েছে, 
  • গ্রাফিক ডিজাইন কাকে বলে, 
  • গ্রাফিক ডিজাইন এর চাহিদা কেমন, 
  • তারা মূলত কি করে, 
  • তাদের মূল কাজ কি, 
  • গ্রাফিক ডিজাইনার হতে আপনাকে কোন কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে, 
  • এটিতে কোন কোন সফটওয়্যার ব্যবহার হয় ,

ইত্যাদি নানান বিষয় সম্পর্কে। এছাড়া গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ইউটিউব চ্যানেল ও আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের সাবস্ক্রাইব করে তাদের ভিডিওগুলো দিয়ে সর্বোচ্চ জানার চেষ্টা করতে হবে। ইউটিউব ভিডিও দেখে এক মাসের যতোটুকু সম্ভব গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে জানা এবং তার টুকিটাকি চেষ্টা করবেন। আপনি আপনার ব্যবহারের প্রয়োজন সফটওয়্যার সমূহ সম্পর্কে সর্বোচ্চ এক্সপার্ট হওয়ার চেষ্টা করবেন।

২. ডিজাইন কপি করা । Copy other work (১৫ দিন)

ইউটিউব থেকে আপনি আপনার একমাস সময় অতিবাহিত করার পরে আপনার কাজ হবে অন্যের ডিজাইন কপি করা। আপনি এই ডিজাইনগুলো কোথাও সাবমিট করবেন না। আপনি অন্যদের করা বিভিন্ন ডিজাইন খুঁজে বের করবেন এবং সকল চেষ্টা করবেন নিজ থেকে। কোন টুল সম্পর্কে না জানলে তোমার সমস্যা হলে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে সে সম্পর্কে জেনে নিবেন। অবশ্যই চেষ্টা করবেন শুরুর দিকে সহজ হয় এমন ডিজাইনগুলো  খুঁজে বের করে কপি করা।গুগোল ফেইসবুক এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে অন্যের করা ডিজাইন গুলো পেতে পারেন।

৩. সোসিয়াল মিডিয়া । Social media (২সপ্তাহ)



এখন আপনার কাজ হবে সোসিয়াল মিডিয়া সম্পর্কে জানা। আপনি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার আধিপত্য বিস্তার করতে চেষ্টা করবেন। যেমন ধরুন ফেসবুক। আপনি ফেসবুকের ডিজাইন সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রুপ ও পেইজে এড হতে পারেন। যারা ডিজাইন পারে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং সর্বোচ্চ জানার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ব্যবহার ভালো থাকা জরুরি। আপনার আরেকটি কাজ হবে ডিজাইন সম্পর্কে থাকা সমস্ত রকমের ওয়েবসাইটগুলোর সাথে  নিজের সম্পর্ক গড়ে তোলা।যেমন একজন ডিজাইনার এর জন্য প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট এর কথা বলতে গেলে Dribbble, Behance অন্যতম। এসময়টির ভিতরে আপনি অবশ্যই ইন্টারনেট জগতে থাকা সমস্ত রকমের জনপ্রিয় ব্যবহারযোগ্য ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে নিজের সম্পর্ক গড়ে তুলবেন। যেমন

৪. অনলাইন কোর্স বা ইউটিউব । Online Course (কোর্স হিসেবে সময়সীমা নির্ধারিত হবে)

এবার আপনাকে কিছু খরচ করতে হবে। একজন প্রফেশনাল হতে গেলে অবশ্যই একটি ভালো কোর্সের অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যারা শুধুমাত্র ইউটিউব ব্যবহার করে শিখে  ফ্রিল্যান্সিং জগতে সফল হয়েছে। তবে এ সংখ্যা খুবই সীমিত এবং অত্যাধিক কষ্টসাধ্য। আপনি যদি আর্থিকভাবে কোর্স কেনার জন্য স্বাবলম্বী না হন তবে এই সময়টি আপনাকে ইউটিউবে ব্যয় করতে হবে।তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আরো বেশি সময় ব্যয় করতে হবে একটি কোর্স করার তুলনায় এবং জানতে হবে সেই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে গ্রাফিক ডিজাইন-এ রয়েছে। আপনাকে এসব বিষয় সম্পর্কে খুঁজে খুঁজে জানতে হবে এবং ইউটিউবে সার্চ দিয়ে সে সম্পর্কে শিখতে হবে। কোর্স করার বিষয়টিকে আপনাকে অবশ্যই ভালো একটি কোর্স বাছাই করতে হবে। এখানে তাদের পূর্ববর্তী কোর্সের রিভিউ এবং লাইফটাইম সাপোর্ট দেখে কোর্সগুলো করাই অতি উত্তম। সবথেকে ভালো হয় অফলাইনে সরাসরি কোর্স করা। তবে সম্ভব না হলে অনলাইনে করতে পারেন। অনলাইনে বিভিন্ন রকমের সাইট রয়েছে যারা এসব কোর্স সততার সাথে বিক্রি করে আসছেন যেমন 10minuteschool, brightskills ইত্যাদি। এসময় আপনি নিজ থেকে নতুনভাবে বিভিন্ন রকমের প্রজেক্ট তৈরি করবেন। আপনার শিক্ষকের করা কাজগুলো যথাসম্ভব কপি করবেন এবং নিচ থেকে নতুন নতুন বিভিন্ন কাজ করে নিজ থেকেই সেগুলোর রিভিউ দিবেন। এ সেক্টরে আপনার সময়টা একটু বেশি দিতে হবে। এ সময় আপনি আপনার কোর্স শেষ হলেও অত্যাধিক পরিমাণে নিচ থেকে নতুন নতুন কাজ করবেন এবং চেষ্টা করবেন নতুন কিছু তৈরি করার, সব থেকে আলাদা এবং প্রফেশনাল।

৫. অন্যের প্রতিক্রিয়া । Feedback (“ক্রিয়েটিভ প্রফেশনাল ওয়ার্ক” শব্দটি না শোনা পর্যন্ত)

আপনি আপনার কাজগুলো ফেসবুক সহ নানান সোসিয়াল মিডিয়া প্লাটফর্মে তাদের ফিরছে পোস্ট করবেন। যেমন আপনি পোষ্টের উপর লিখতে পারেন

  • আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিন,
  • কিভাবে কাজটি আরও উন্নত করতে পারি,
  • একটি  শিক্ষনীয় ফিডব্যাক আশা করছি,
  • একই কাজটি কিভাবে প্রফেশনাল  করে তুলতে পারতাম,
  • ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে খুব উপকৃত হতাম,

ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যাপশনে আপনি আপনার ডিজাইনগুলো পোস্ট করতে পারেন এবং প্রফেশনালদের মেনশন করে দিতে পারেন সেখানে। আপনি এই কাজটি  ততদিন পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন  যতদিন না পর্যন্ত লোকজন আপনার কাজকে “ক্রিয়েটিভ প্রফেশনাল ওয়ার্ক” বা ভুলবিহীন প্রফেশনাল কাজ হিসেবে আখ্যায়িত না করছে।

৬. বিনামূল্যে সেবা । Free service offer (২০দিন)

প্রাকটিসের উপর কোন কথা হয়না। তাই আপনি এই সময়ে টানা 20 দিন খেয়ে না খেয়ে কাজ করে যাবেন বিনামূল্যে মানুষকে সাহায্য করতে। আপনি আপনার এই বিনামূল্য সেবা তাদের কি দিবেন যারা সত্যিকারে কাজটি করাতে এসেছে এবং কাজটি করানোর জন্য লোক খুজছে। আপনি তাদেরকে বিনামূল্যে অফার করলে তারা অবশ্যই বিষয়টি মেনে নিবেন। আপনি তাদেরকে বলতে পারেন আপনার কাজ তারা গ্রহণ না করুক অন্তত একবার যেন আপনার কাজটি দেখে তারা বলে যে কাজটি তাদের গ্রহণযোগ্য কি নয়। আপনি এই 20 দিন কোন বিশ্রাম নিবেন না। আপনি এসব কাজ খুঁজে পেতে পারেন বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের পোস্ট থেকে এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং freelancer.com এর মতো ওয়েবসাইট থেকে।যেখানে অন্যরা কাজ পোস্ট দিয়ে রাখে এবং আপনার কাজ হয় তাদেরকে অফার দেয়া অথবা আপনি সেই বিষয় সম্পর্কে কাজ করে তাদেরকে সাবমিট করা।

৭. সোসিয়াল মিডিয়া এ কাজ । Work on social media (সর্বদা)

20 দিনের পর আপনি আরেকটি কাজ ও ফ্রিতে করবেন না। সবকটি কাজের জন্য নিজের একটি পারিশ্রমিক ধার্য করবেন এবং তার বাইরে কাজটি করতে রাজি হবেন না এসময় আপনি বেশি বেশি নিজ থেকে বিভিন্ন রকমের কোম্পানির পোস্টার অথবা আপনি যে সেক্টরে কাজ করেন সেই সেক্টর এর ডেমো বানাবেন এবং এগুলো বানাতেই থাকবেন যখন আপনি ফ্রি থাকবেন। এ সময়টিতে বেশিরভাগ মুহূর্তই আপনি কাজ পাবেন না। তবে আপনি হার মানবেন না এবং  ডেমো বানিয়ে পোস্ট করতেই থাকবেন ফ্রী গ্রুপগুলোতে অথবা আপনার আইডিতে। কিভাবে করে এই সিস্টেমটি আপনি চালু রাখবেন এবং অবশ্যই নিজের করা  ডেমোগুলোতে ভালোভাবে আপনার নাম অথবা ইমেইল এড্রেস অথবা আপনার সাথে যোগাযোগ করার কোন রকমের পন্থা ব্যবহার করবেন।

৮. পোর্টফোলিও । Portfolio (সর্বদা)



আপনার করা এই পর্যন্ত সমস্ত রকমের ইউনিক কাজ, ডেমো, ফ্রিতে করা কাজ, সোসিয়াল মিডিয়া থেকে করা কাজগুলোদিয়ে সুন্দর একটি পোর্টফোলিও বানিয়ে তুলবেন। এক্ষেত্রে ভালো হয় নিজের একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে তোলা। তবে সামর্থ্য না থাকলে আরো বিভিন্ন রকমের পন্থা রয়েছে যেগুলো আপনি ইউটিউব থেকে জেনে নিতে পারেন। এমতাবস্থায় আপনি নিজের একটা ফেইসবুক পেজ বানিয়ে সেটিকেও একটি পোর্টফোলিও হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন

৯. মার্কেটপ্লেস অ্যাকাউন্ট খুলুন । Marketplace account

এবার আপনাকে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে আপনার আধিপত্য বিস্তারে নামতে হবে। আপনি ইউটিউব থেকে মার্কেটপ্লেস একাউন্ট গ্রো করার অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন, সেগুলো দেখবেন এবং নিজের একাউন্ট গ্রো করার চেষ্টা করবেন। শুরুতে আপনি অবশ্যই নির্দিষ্ট কয়েকটি মার্কেটপ্লেস বাদে অন্য কোথাও নিজের একাউন্ট খুলবেন না। অন্যান্য জায়গায় অ্যাকাউন্ট খুললে আপনার একাউন্ট ডাউন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে কেননা আপনার শুরুর দিকে কাজ পাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হবে এবং এটিতে বেশ সময় লাগতে পারে। তবে আপনি কাজ মন দিয়ে করলে এটা তেমন একটা সময় নিবে না বলে আশা করা যায়। আপনি যেসব সাইটে নিজের একাউন্ট খুলতে পারেন

এছাড়া বুদ্ধিমানের কাজ এই সময় শুধুমাত্র রিমোট জব এবং কনটেস্ট মার্কেটপ্লেসের উপর নির্ভর না করে বিভিন্ন graphicriver, freepik এর মত মাইক্রোস্টক মার্কেটপ্লেসে নিজের করা ডিজাইন গুলো বিক্রি করার চেষ্টা করা। আপনি এইসব মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষনীয় ভিডিও ইউটিউবে অহরহ পাবেন, সেখান থেকে শিক্ষা নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। 

১০. পোর্টফোলিও আপগ্রেড করুন । Upgrade portfolio

আপনাকে এসব মার্কেটপ্লেসে নিজের আধিপত্য বিস্তার করার পাশাপাশি সর্বদা নিজের পোর্টফলিও আপগ্রেড করতে হবে। একটু নতুন কিছু করলেই সেটা আপনার পোর্টফলিওতে তাৎক্ষণিক যোগ করে দিবেন, এতে করে আপনার পোর্টফোলিও এর সংরক্ষণ বেশি হবে।



"এখন আপনি নিজেকে একজন এক্সপার্ট ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দাবি করতে পারেন অথবা এক্সপার্ট গ্রাফিক ডিজাইনার । এবার শুধু ঘরে বসে বসে 

নিজের একাউন্ট গ্রো করবেন

মার্কেটপ্লেস ও অন্যান্য জায়গা থেকে আসা কাজগুলো গ্রহণ করবেন, 

নিজের বায়ারকে সর্বোচ্চ খুশি রাখার চেষ্টা করবেন, 

নিজের পোর্টফলিও সর্বদা আপগ্রেড এর উপর রাখবেন এবং 

ফ্রিল্যান্সিং জগতে নিজেকে উন্নত করে তুলতে চেষ্টা করবেন।"

- ধন্যবাদ -

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post